প্রকাশিত: Fri, Feb 10, 2023 4:36 PM
আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 9:39 AM

সামরিক সরঞ্জামের ভুয়া ক্রয়াদেশ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার আবেদন, গ্রেপ্তার ৭

মাসুদ আলম: মার্কিন কোম্পানি ‘আমেরিকান সিগন্যাল করপোরেশন’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশের ‘সারা এন্টারপ্রাইজ’। মার্কিন কোম্পানিটির কাছে উপস্থাপন করা হয় ডিরেক্টরেট জেনারেল ডিফেন্স পারচেজের (ডিজিডিপি) মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের সামরিক সরঞ্জামের ক্রয়াদেশ। এসব সরঞ্জাম কেনার আগে সারা এন্টারপ্রাইজের ৬ জনকে প্রশিক্ষণ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা অনুমোদনের গ্যারান্টি দেওয়ার অনুরোধ করা হয় আমেরিকান সিগন্যাল করপোরেশনকে।

ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বলা হয় কোম্পানিটিকে। ওই কোম্পানিটি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে জানালে তদন্তে বেরিয়ে আসে নেপথ্যের কাহিনী। মূলত মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে ওই ৬ জনকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে বেছে নেওয়া হয় অভিনব এই পন্থা। ভুয়া ক্রয়াদেশ পাঠিয়ে ভিসা প্রাপ্তির আবেদন করা চক্রের মূলহোতাসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মূলহোতা মো. রেজাউল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মো. আজিজুর রহমান, মো. খায়রুল কবির, সাদেকুর রহমান, মো. শাহরিয়ার হোসেন বিক্রম ও মুহাম্মদ আবু বক্কর। বুধবার রাতে রাজধানীর রামপুরা  থেকে তাদের গ্রেপ্তার  করা হয়। 

ডিবি জানায়, ডিজিডিপির ভুয়া ক্রয়াদেশ দেখিয়ে প্রতারক রেজাউল দীর্ঘদিন ধরে ইতালি, পোল্যান্ড ও চেক রিপাবলিকসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠিয়েছেন। এজন্য প্রতি জনের কাছ থেকে ১৮-২০ লাখ টাকা করে নিতেন তিনি। সবশেষ একই কায়দায় সামরিক সরঞ্জাম কেনার ভুয়া ক্রয়াদেশ বানিয়ে ৬ জনকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে গিয়ে ধরা পড়েন রেজাউল। সারা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সবুজ আলম নামে একজন আমেরিকান সিগন্যাল করপোরেশনকে ডিজিডিপির ক্রয়াদেশ উপস্থাপন করেন। তারা ১.২ মিলিয়নের অধিক মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানি। তারা মার্কিন কোম্পানিকে ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য সারা এন্টারপ্রাইজের ৬ জনের ভিসা অনুমোদনের গ্যারান্টি দেওয়ার অনুরোধ করে। মূলত ওই ৬ ব্যক্তির প্রশিক্ষণ গ্রহণের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। তারা এই প্রতারণামূলক কাজটি ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অভিবাসনের জন্য মার্কিন ভিসা পেতে ব্যবহার করেছিল।

ডিবি আরও জানায়, রেজাউল ২০১১-১২ সালে নিজ কোম্পানি ডিফেন্স আইকনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে লোকাল টেন্ডারে চাল-ডাল ইত্যাদি সরবরাহ করতেন। সরকারি কাজের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি প্রতারণার কৌশল রপ্ত করেন। তিনি ডিজিডিপির ক্রয় পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষভাবে পারদর্শী। পরবর্তী সময়ে তার এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ২০১৪-১৫ সাল থেকে ১৮-২০ লাখ টাকার বিনিময়ে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছেন। রেজাউল একাধিক পরিচয় দিতেন। তিনি নিজেকে কখনো সবুজ আলম, কখনো মেজর বসির পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। রেজাউল নিজেকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দিয়ে অন্য গ্রেপ্তার আসামিদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অবৈধ পথে আমেরিকায় পাঠানোর চেষ্টা করছিলেন। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব